
হুইল চেয়ারে বসে ফটো সেশন করেও চেয়ার পেতে প্রতারনার শিকার হয়েছে উলিপুরের বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধি শিশু হাবিবুল্লাহ্। বাবার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ইউপি সদস্য হওয়ায় প্রতিশ্রুতি প্রদানের দশ মাস অতিবাহিত হলেও আজও সরকারি সুযোগ-সুবিধা তার ভাঙ্গে জুটেনি।
জানাগেছে,কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের ভন্নারটারী গ্রামের সুবিধা বি ত আপাদমস্তক প্রতিবন্ধি শিশু হাবিবুল্লা জন্মের ৮ বছরেও প্রতিবদ্ধির তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হতে পারেনি। আজও বিকলাঙ্গ শরীর নিয়ে বিছানায় শুয়ে হামাগুড়ি দিয়ে কাতরাচ্ছে। নিস্পাপ এই শিশুটি স্বাভাবিক নিয়মে পরিপূর্ন দেহে মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হলেও ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় তার জীবন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়েছে। তাই তার মাঝে বৈচিত্রময় পৃথিবীর কোন কিছুই আনুভূত হয় না। শুধু বিছানায় শুয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। হাত-পা, চোখ-কান, বাক-বুদ্ধিসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থাকলেও বিকল লাশের মত পরে আছে সে। বিকট শব্দ পেলেই মাঝে মধ্যেই চম্কিয়ে উঠে। নির্বোধ শিশুটি যেন জন্মদাতা পিতা-মাতাকেও চেনে না। পৃথিবীর বিবেকবান যে কোন মানুষ তাকে এক নজর দেখলেই কেঁপে উঠবে তাঁদের হৃদয়। বাবা সরওয়ার জাহান সাজু জানান, তার ছেলে হাবিবুল্লা গত ১লা অক্টোবর/২০১০ইং সকাল ১১টায় স্বাভাবিক নিয়মে নিজ বাড়ীতে জন্ম গ্রহন করে। জন্মের কিছুক্ষন পর তার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। পুত্রের এমতাবস্থা দেখে বাবা সাজু দিশাহারা হয়ে পরে। সন্তানকে নিয়ে দ্রুত ছুঁটে যায় কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে। সেখানে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার কারণে শিশুপুত্র হাবিবুল্ল্’ার ক্্রমাগত অবস্থার অবনতি বুঝতে পেরে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত পিতা সাজু রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করান। এতে তার শ্বাসকষ্টের সুস্থ্যতা ফিরে আসলেও সারা জীবনের জন্য আপাদমস্তক প্রতিবন্ধি হয়ে বাড়ীতে ফিরে আসতে হয় তাকে। পরে সাজু ছেলেকে নিয়ে হাজারো চেষ্টা করেও হাবিবুল্লাকে সুস্থ্য করতে পারেনি।
পান্ডুল ইউপি’র বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর জব্বার মঙ্গা, সাবেক চেয়ারম্যান আক্তারুল করিম হারুন ও ১নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার সহিদুর রহমানের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধি হাবিবুল্লাকে ৮ বছরেও প্রতিবন্ধি জরিপের আওতায় তালিকা ভূক্ত করাতে পারেনি বলে প্রতিবন্ধির পিতা সাজু জানিয়েছেন। এব্যাপারে উলিপুর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা জানান, প্রতিবন্ধি হাবিবুল্লা জরিপে আওতায় না আসলেও তার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। অপরদিকে ইউনিয়ন সবাজ সেবাকর্মী আমিনুল ইসলাম লাল জানান, তাকে জরিপের আওতায় আনা হয়েছে। বিগত ২৪ এপ্রিল/২০১৪ইং তারিখে পান্ডুল ইউপি কেন্দ্রে ১৩১ নং জরিপ ফরমে তালিকাভূক্ত করে হাবিবুল্লার ছবি তোলা হয়। ছবি নং ৪৪০৬। কিন্তু প্রতিবন্ধির সুযোগ-সুবিধা থেকে বি ত হয় ইউনিয়ন প্রতিবন্ধি কমিটির উদাসীনতার কারণে।
ঘটনাক্রমে গত বছরের জুলাই মাসে উলিপুর প্রেসক্লাবের সদস্য ফয়জার রহমান রানু ও হাফিজ সেলিম “উলিপুরে আপাদমস্তক প্রতিবন্ধি শিশু হাবিবুল্লাহ্ আজও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পায়নি” শিরোনামে একটি স্বচিত্র প্রতিবেদন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করলে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামের নজরে পরে। সে সময় তিনি ঐ শিশুকে দেখেন এবং খোজ-খবর নিয়ে তাকে অনুদান ও ভাতাদি প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। তদানুযায়ী উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা সরকারি সুযোগ-সৃবিধা দেয়র প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি প্রদানের দশমাস অতিক্রাম হলেও সুযোগ-সুবিধা পেতে বর্তমান অনিশ্চয়তায় পরেছে প্রতিবন্ধীর পিতা। এদিকে ‘পান্ডুল অনুশীলন সাংস্কৃতিক জোট’ নামে একটি বেসরকারী সংস্থা গত ৪ জুন/২০১৭ইং তারিখে প্রতিবন্ধি শিশু হাবিবুল্লকে হুইল চেয়ার দেয়ার কথা বলে একটি পুরনো হুইল চেয়ারে বসিয়ে ফটো সেসন করে গত ২৭মার্চ/২০১৮ইং তারিখে আর্থিক অনুদানসহ একটি নতুন হুইল চেয়ার দেয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাদেরও প্রতারনার শিকার হয়েছে প্রতিবন্ধী ঐ শিশুটি।