
ইরান পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও স্বাক্ষরকারী অন্য পশ্চিমা দেশগুলো চুক্তিতে অটুট থাকার ব্যাপারে তাদের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি চুক্তিতে থাকা সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যেন চুক্তি বাস্তবায়নে বাধা না দেয় সে জন্য তাদেরকে এই তিন ইউরোপীয় মিত্র অনুরোধও করেছে বলে খবর বিবিসির।
“চুক্তি যেন অক্ষুণ্ন থাকে তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমাদের সরকারগুলো। চুক্তি যেন বহাল থাকে সেজন্য এতে থাকা অন্যান্য পক্ষের সঙ্গেও কাজ করব আমরা,” ট্রাম্পের ঘোষণার পর এক যৌথ বিবৃতিতে বলে দেশ তিনটি।
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিটির অন্য দু্ই প্রভাবশালী অংশীদার রাশিয়া ও চীন পরমাণু চুক্তি অক্ষুণ্ন রাখতে সহায়তা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে।
ইরান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই চুক্তিকে বাঁচানো যায় কি না তা নিয়ে চেষ্টা চলছে।
মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সামনের সপ্তাহগুলোতে ইউরোপের ওই তিনটি দেশসহ রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে এ বিষয়ে মধ্যস্থতা শুরুর নির্দেশ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
“অন্যান্য দেশের সহায়তায় যদি আমরা চুক্তিতে ঠিক করা লক্ষ্য অর্জনে সমর্থ হই, তাহলে এটি (চুক্তি) বলবৎ থাকবে,” বলেছেন তিনি।
ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের সঙ্গে নতুন চুক্তির জন্য সমঝোতায় আগ্রহী তিনি। তবে তার এই ঘোষণাকে অবৈধ আখ্যায়িত করে তেহরান বলেছে, এভাবে চুক্তি থেকে সরে আসা আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রতি অবমাননা এবং তা অগ্রহণযোগ্য।
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করল যে, নিজের অঙ্গীকারের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নেই।”
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি পুনরায় শুরু করার নির্দেশ দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্পের ঘোষণার পর এক যৌথ বিবৃতিতে ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য বলেছে, তারা এই চুক্তির প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। ইরানকে শান্ত থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন তিন দেশের নেতারা।
ট্রাম্প ঘোষণা দিলেও ইরানের ওপর তাৎক্ষণিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে না; এজন্য ৯০ থেকে ১৮০ দিন কিংবা এরও বেশি সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।
নতুন নিষেধাজ্ঞায় তেহরানের শিল্প খাত, তেল, এয়ারক্রাফট রপ্তানি খাত ও মূল্যবান ধাতু বাণিজ্যকে লক্ষ্য বানানো হবে। মার্কিন ডলার কিনতে ইরান সরকারের চেষ্টা যেন ব্যাহত হয় সে চেষ্টাও করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ইরানের সঙ্গে ব্যবসা গোটাতে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোকে ছয় মাসের সময় দিয়েছেন বলেও খবর মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর। নাহলে ওই কোম্পানিগুলোকেও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।
ইরান শুরু থেকেই বলে আসছে তার পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। তিন বছর আগে স্বাক্ষরিত চুক্তির শর্ত যে ইরান ধারাবাহিকভাবে মেনে চলছিল আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পর্যবেক্ষকরাও সে বিষয়ে নিশ্চিত করেছিল।
এরপরও ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে হওয়া চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ায় ‘গভীর হতাশার’ কথা জানিয়েছে রাশিয়া।
জাপান বলছে, তারা চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়া প্রভাব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক ফেডেরিকা মগহেরিনি বলেছেন, ইইউ চুক্তিটি রক্ষায় ‘অঙ্গীকারাবদ্ধ’।
চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার ট্রাম্পের ঘোষণায় ফেইসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখছিল বলেও মন্তব্য তার।
“জেসিপিওএ থেকে বেরিয়ে আসার ভেতর দিয়ে আমেরিকার ঘনিষ্ঠ ইউরোপীয় মিত্রদের পৃষ্ঠ প্রদর্শন করলাম আমরা। এটা ছিল এমন এক চুক্তি যেখানে দেশের শীর্ষ কূটনীতিক, বিজ্ঞানী ও দক্ষ গোয়েন্দারা মধ্যস্থতা করেছিলেন,” বলেন তিনি।
জাতিসংঘ মহাসচিবের এক মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণায় মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। স্বাক্ষরকারী অন্য দেশগুলোকে চুক্তির প্রতিশ্রুতিতে অটুট থাকারও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘ত্রুটিপূর্ণ’ চুক্তি বাতিলে ট্রাম্পের ‘সাহসী’ ঘোষণায় ‘পূর্ণ সমর্থন’ আছে তাদের।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবও চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণায় ‘সমর্থন ও সাধুবাদ’ জানিয়েছে।